নিজস্ব সংবাদদাতা | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৬ : ২৯

শহরে একের পর এক খুন। সূত্র খুঁজে বের করার দায়িত্ব সুব্রত দত্তর!

শুক্রবার সাত সকালে তিনি উপস্থিত লেক গার্ডেন্সে। সূত্রের সন্ধানে রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ করছেন! কিন্তু পেলেন কি? সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রমের পর দুপুরে তিনি পূর্ব কলকাতার এক হোটেলে। একটু বিশ্রাম। দুপুরের খাওয়াদাওয়া। মেনুতে ফ্রায়েড রাইস, স্যালাড আর মাংস। খোঁজ পেয়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল আজকাল ডট ইন। ব্যাপারটা কী? তখনই ‘মানিক সেন’ ওরফে সুব্রত ফাঁস করেছেন আসল খবর। বললেন, ‘‘অরফিউস মুখোটির আগামী ছবি ‘মুখোশে মানুষে খেলা’য় আমি গোয়েন্দা। খুনের তদন্ত করতে হবে। সকালে তারই ‘চেজিং সিন’ ছিল।’’ কালো পোশাক, চওড়া গোঁফে অভিনেতার লুকটাই বদলে গিয়েছে!

সুব্রত এর আগে ‘ব্যোমকেশ বক্সী’র সহকারী ‘অজিত’ হিসেবে জনপ্রিয়। এবার তিনি গোয়েন্দা। কাকে অনুসরণ করছেন? বাংলায় গোয়েন্দা একমুঠো ‘মানিক সেন’ তাদের সঙ্গে এক পংক্তিতে জায়গা পাবে?

আজকাল ডট ইন প্রশ্ন রাখতেই সুব্রত বললেন, ‘‘কখনও কাউকে অনুসরণ করিনি। নিজে চরিত্র বুঝে অভিনয় করেছি। এটাও তাই। আমার কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই। আমার মতো করে ‘মানিক সেন’কে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’’ ওই দিন ছিল ছবির শেষ দিনের শুট। সুব্রত জানিয়েছেন, তিনি শুনেছিলেন অরফিউসের শুটিং করার ধরণ নাকি আলাদা। এই প্রথম কাজ করতে গিয়ে সেটা বুঝতে পেরেছেন। বাংলায় আপাতত গোয়েন্দা আর রহস্যধর্মী ছবির রমরমা... কথাশেষের আগে অভিনেতার দাবি, ‘‘এটা আমিও খেয়াল করেছি। মুম্বইয়ে সেটা হয় না। দক্ষিণে তো নয়ই। মুম্বই লার্জার দ্যান লাইফ ছবি বানায়। দক্ষিণী ছবিতে নায়ক ঈশ্বরসমান! মনে হয়, বাঙালি মাথা খাটাতে ভালবাসে। তাই ছবিতে বুদ্ধির মারপ্যাঁচ।’’ তারপরেই রসিরতা, সামনে নির্বাচন। বাস্তবেও কিন্তু গোয়েন্দারা বেশ ব্যস্ত। 

সুব্রত যখন দুপুরের খাওয়ায় ব্যস্ত তখন ছোট্ট করে বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছিলেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। তিনি এই ছবির মুখ্য চরিত্র ‘নন্দিনী’। সিরিজ ‘লজ্জা’র ‘জয়া’র সঙ্গে আসমানজমিন ফারাক। ছিপছিপে শরীর জড়িয়ে কর্পোরেট পোশাক। হাল্কা রূপটানে নায়িকা সহজসুন্দরী। ছবিতে তিনি ‘নন্দিনী’। মুখোমুখি হতেই নিজের চরিত্র নিয়ে সবিস্তার বললেন, ‘‘কর্পোরেট দুনিয়ার মেয়ে নন্দিনী। নিজের কাজের বাইরে আর কিচ্ছু বোঝে না। দিনরাত পরিশ্রম করে। একের পর এক খুনের কিনারায় সেও জড়িয়ে পড়বে। রহস্যধর্মী ছবি। এর বেশি তো বলতে পারব না!’’ অর্থাৎ, গোয়েন্দার মহিলা সরকারী? মিষ্টি হেসে জানালেন, সেটা ছবি বলবে। এই ছবিতে তিনি সহকারী। আগামী কোনও ছবিতে কি তিনি গোয়েন্দা চরিত্রে? হেসে ফেলে জবাব, ‘‘একাধিক কাজের ডাক পাচ্ছি। কোনওটায় গোয়েন্দা হব কিনা, জানতে ধৈর্য ধরতে হবে।’’




‘গোয়েন্দা’ নকল হলেও তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিন্তু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি! এসিপি অলোক সান্যাল ছবিতে পুলিশ কমিশনার। সাদা শার্ট, জিন্সে ধোপদুরস্ত। হোটেলের ছাদের উপরে তাঁর জন্য নকল অফিসঘর। সেখানে পৌঁছে পুলিশি নজরে পুরো ঘর জরিপ করলেন। সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের ছবি তাকের উপরে রাখা। নিজে হাতে সেই ছবি দেওয়ালে লাগিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের অফিসে এভাবেই রাখা থাকে।’’ জানালেন, রহস্যধর্মী ছবিতে একজন করে সত্যিকারের পুলিশ থাকলে পরিচালকের আখেরে লাভ। অনেক খুঁটিনাটি জিনিস তিনি ধরিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া, চরিত্রও নিখুঁত ফোটান তিনি। 

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এবার পরপর তিনটি খুনের দৃশ্য শুট। সবাই ফের জোরকদমে কাজে নেমে পড়েছেন। হোটেলরই একটি ঘরে শুট। উপুড় হয়ে শুয়ে মৃত ব্যক্তি। তাঁকে খুঁটিয়ে দেখে সূত্র বের করার চেষ্টায় সুব্রত। পরের দৃশ্যে প্রিয়াঙ্কা আসবেন। কয়েক বার টেকের পর কাট বলে আজকাল ডট ইনের মুখোমুখি পরিচালক। অরফিউস বললেন, ‘‘বেশি কিছু ছবি বানিয়েছি। কোনও দিন বাণিজ্য নিয়ে ভাবিনি। এই ছবির ক্ষেত্রেও সেই ধারা থাকছে। সুব্রত-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তাই অনায়াসে ছোটপর্দার অভিনেতা, নতুনদের নিয়েছি। দুই প্রথম সারির কর্পোরেট অফিসের কর্তাদের মধ্যে টানাপড়েন। যার জেরে খুন। প্রযোজক-অভিনেতা জয়দীপ চক্রবর্তীর গল্প। খুব টানটান। গল্প শুনে মনে হয়েছে ঠিকমতো তৈরি করতে পারলে ভাল ফল করবে।’’ 



‘মুখোশে মানুষে খেলা’র গল্প লেখার পাশাপাশি জয়দীপ এই ছবির নায়কও। নিজে দাঁড়িয়ে দেখভাল করেছেন। পরিচালক ৫ দিনে শুট শেষ করে দিয়েছেন। তাই চওড়া হাসি প্রযোজকের মুখে। পরিচালনার পাশাপাশি দীপক কুমারকে নিয়ে চিত্রনাট্যও লিখেছেন অরফিউস। গানের দায়িত্বে কৌশিক ঘোষ। ক্যামেরায় সৌরভ দে।